Sunday, January 22, 2017

ডায়েট এখন শীত খাবারে


নিজের সুস্থতার জন্যই মেনে চলতে হয় বিভিন্ন বিধিনিষেধ। আর এই বিধিনিষেধের মধ্যে প্রধান হলো ডায়েট। নিজের খাদ্যতালিকাকে কাটছাঁট করে নির্দিষ্ট কিছু খাবারের মধ্যে পরিসর সীমিত করে ফেলা। নিত্যদিনের ডায়েটে অনেকেই পানসে বোধ করেন। একই খাবার আর কদিন! তাঁদের জন্য কিন্তু এই শীতকালটা মোক্ষম সময়। কেননা, শীতের টাটকা সবজি এবং ফলমূল আহারে আপনার একঘেয়েমি যেমন দূর হবে তেমনি সমানতালে চলবে ডায়েট।

আপেল বাড়তি কোলেস্টেরলও কমাতে সাহায্য করেবিভিন্ন ধরনের শীতের খাবার

এত সব শীতের খাবারের মধ্য থেকে আপনি কোনটি বেছে নেবেন বা কী পরিমাণে খাবেন, এ বিষয়ে বিস্তারিত জানান পুষ্টিবিদ আখতারুন্নাহার আলো। তিনি বলেন, ‘শীত যেমন মজার সব খাবার নিয়ে আসে, তেমনি এনে দেয় ওজন কমানোর মতো কিছু খাদ্য উপাদানও। আর এসব খাদ্য উপাদানে থাকে শর্করা, আমিষ, ভিটামিন এবং প্রচুর পরিমাণ পানীয়। আবার কিছু সবজি আছে যা আপনি অনায়াসেই ভাতের বিকল্প হিসেবে খেতে পারেন। ফলে আপনার ডায়েট তো হচ্ছেই পাশাপাশি আপনার ক্যালরির ঘাটতিও পূরণ হচ্ছে।’

 আখতারুন্নাহার আলোর মতে, নির্দিষ্ট কয়েকটি সবজি এবং ফল প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় রাখা উচিত।

ফুলকপি: ফুলকপি হলো শীতের একপ্রধান সবজি। ভাতের বিকল্প হিসেবে আপনি এটি বেছে নিতে পারেন। কেননা, এর অন্যতম খাদ্য উপাদান হলো লো ক্যালরি। সাধারণত এক কাপ ফুলকপিতে ২৯ শতাংশ লো ক্যালরি থাকে। তাই ভাতের বিকল্প শুনে ঘাবড়ে যাবেন না। লো ক্যালরি আপনার ডায়েট পূরণ করবে শতভাগ।

সবজি হিসেবে তো আছেই সঙ্গে স্যুপ, চালের গুঁড়ো দিয়ে ভেজেও খেতে পারেন এটি।

টমেটো: শীতে টমেটো খেতে পারেন। এতে আছে লো ফ্যাট, সোডিয়াম, ভিটামিন ই, বি ও সি। তাই খাবারের তালিকায় এটি রাখলে আপনার ওজন কমানো নিয়ে খুব একটা চিন্তা করতে হবে না।

গাজর: প্রায় সারা বছর পাওয়া গেলেও গাজর মূলত শীতের সবজি। মাংসের পরিবর্তে এটি খাওয়া যেতে পারে। চাইলে নাশতা হিসেবেও কাঁচা খেতে পারেন। ডায়েটের পাশাপাশি এটি আপনার ত্বকের কোমলতাও বজায় রাখবে।

নিয়মিত শীতের সবজি খেলে ওজন বাড়বে না। ছবি: অধুনাবাঁধাকপি: ফুলকপির মতো এটিও আপনার ভাতের চাহিদা মিটিয়ে দেবে। এরও অন্যতম খাদ্য উপাদান লো ফ্যাট অথচ প্রচুর পরিমাণ ফাইবারে ভরপুর। অল্প তেলে ভাজি করে কিংবা স্যুপ, সালাদের সঙ্গে এটি খেতে পারেন। আর এর স্যুপ তো একেবারেই ক্যালরিবিহীন।

পালংশাক: অন্য যেকোনো সবুজ সবজির চেয়ে পালংশাকে রয়েছে দ্বিগুণ পরিমাণে আঁশ। তাই ডায়েটে এর গুরুত্বটাও বেশি। এর আরেকটি খাদ্য উপাদান হলো অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, যা আপনার শরীরকে অধিক কর্মক্ষম করে তুলবে।

ব্রকোলি: দেশি সবজি না হলেও কিন্তু বিভিন্ন খাবারে আমরা এটি রান্না করছি। স্যুপ থেকে শুরু করে সবজি, সালাদ, নুডলস সবকিছুতেই এটি খাওয়া যায়। ব্রকোলিতেও রয়েছে প্রচুর আঁশ। এ ছাড়া এর ভিটামিন কে, সি আপনার ত্বকের জন্য উপকারী। সেই সঙ্গে এর ক্যালরির পরিমাণও খুব কম থাকে। যেমন, এক কাপ ব্রকোলিতে রয়েছে মাত্র ২৫ ক্যালরি।

কমলা এবং স্ট্রবেরি: ভিটামিন সির প্রসঙ্গ এলেই কমলার কথা বলতে হয়। সেই সঙ্গে আপনার ফলেট, পটাশিয়ামের চাহিদাও পূরণ হবে। শুধু ফল হিসেবেই নয়, কমলার তৈরি কেক, জুস, সালাদও খেতে পারেন স্বাদে ভিন্নতা আনার জন্য। কমলার চামড়াও খুব পুষ্টিকর। পরিষ্কার করে নিয়ে কেক বা সালাদের সঙ্গে সামান্য পরিমাণে কমলার খোসা দিতে পারেন।

 আমাদের এখানে স্ট্রবেরি বেশ পরিচিত হয়ে উঠেছে। এক কাপ স্ট্রবেরিতে রয়েছে মাত্র ৫০ ক্যালরি। ডায়েট খাবার না হয়ে আর যায় কোথায়! কমলার মতোই এতে রয়েছে ভিটামিন সি এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। এই উপাদানগুলোই সারা দিনব্যাপী আপনাকে চাঙা করে রাখতে যথেষ্ট।

আপেল: ডায়েটের খাদ্যতালিকায় একটা আপেল থাকবে না, তা কি হয়? এর মধ্যেও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে, যা বহুমূত্র, ক্যানসার, পারকিনসনস রোগের জন্যও উপকারী। এটি আপনার দেহের বাড়তি কোলেস্টেরলও কমাতে সাহায্য করে।

মধু: শুধু শীত মৌসুমেই নয়, সারা বছরই আপনি ডায়েট হিসেবে মধু খেতে পারেন। কুসুম গরম পানিতে ১ চামচ মধু দিয়েই নাহয় শুরু করলেন রোজকার ডায়েট। এটি ত্বক এবং ঠান্ডা-কাশির জন্য খুবই উপকারী।

গরম চকলেট: গরম কিংবা হট চকলেট, এটি আবার ডায়েট খাবার হয় কী করে! হ্যাঁ, আপনার ডায়েট এবং সেই সঙ্গে দুর্বলতা কাটিয়ে তুলবে এই হট চকলেট। বরং প্রতিদিনের কফি এবং চায়ের চেয়ে এটিই ডায়েট-বান্ধব। কেননা, চা কিংবা কফির চেয়ে বেশি অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে এতে।

অন্যান্য সবজি: এ ছাড়া শালগম, মুলা, লাউ, লালশাক, ধনেপাতা, বিটরুটও ওজন কমাতে সাহায্য করে। তাই খাদ্যতালিকায় রাখতে পারেন এই সবজিগুলোও।

মনে রাখুন

শীতকালের অধিকাংশ সবজিতেই প্রচুর ভিটামিন থাকে। আর ফলের তুলনায় অনেক কম ক্যালরি থাকে। তাই খাদ্যতালিকায় সবজির পরিমাণটাও হতে হবে যথেষ্ট।

ডায়েট মানে শুধুই শাকসবজি এবং ফলমূলই নয় কিন্তু। প্রোটিনের চাহিদা পূরণের জন্য মাংসও খাওয়া প্রয়োজন। তবে সবজির তুলনায় অবশ্যই কম পরিমাণে।

এবার তাহলে ঝটপট তৈরি করে ফেলুন একই সঙ্গে মজাদার এবং ওজন কমানোর বিভিন্ন খাবার।

No comments:

Post a Comment