বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে প্রতি বছর বাংলাদেশে সার্ভিকাল ক্যান্সারে মারা যায় প্রায় ৬,৫০০-এরও বেশি নারী। কিন্তু আশ্চর্য এদেশে সার্ভিকাল ক্যান্সার নিয়ে এখনও তেমন জনসচেতনতা তৈরি হয়নি। এর প্রধান কারণ সামাজিক সংস্কার এবং সংকোচ। বাংলাদেশে মেন্সট্রুয়েশন কিংবা যৌনাঙ্গ নিয়ে আলোচনা এখনও ট্যাবু। এনিয়ে প্রকাশ্যে তো নয়ই আপনজনের মাঝেও আলোচনা হয়না। যে কারণে মেয়েরা অস্বাভাবিক রক্তক্ষরণ, দুর্গন্ধযুক্ত স্রাব, যৌনক্রিয়ার সময় ব্যাথা অথবা মেনোপজের পর আবার রক্তক্ষরণ - এ ধরনের বিষয়গুলো ‘ঠিক হয়ে যাবে’ মনোভাব নিয়ে চেপে রাখে। অবশেষে যখন সার্ভিকাল অনেক খারাপ পর্যায়ে পৌঁছে অথবা দেহের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে যায়, তখন ডাক্তারের কাছে গেলেও তেমন কিছু করার থাকে না।
অন্যান্য ক্যান্সারের সাথে সার্ভিকাল ক্যান্সারের অন্যতম পার্থক্য হলো টিকার মাধ্যমে এই ক্যান্সার প্রতিরোধ করা সম্ভব। সার্ভিকাল ক্যান্সারের জন্য দায়ী হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস নামক একধরণের ভাইরাস। টিকার মাধ্যমে এই ভাইরাসের সবচেয়ে কমন স্ট্রেইন গুলির বিরুদ্ধে শরীরে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়। ফলে সার্ভিকাল ক্যান্সার থেকে অনেকখানি সুরক্ষা পাওয়া যায়। । তাই কিশোর বয়সে বিয়ের আগেই এই টিকা দেয়া উচিত। তবে বিয়ের পরেও অথবা বয়স ২৫ বা ৩৫ হলেও এ টিকা দেয়া যায়, তবে সেক্ষেত্রে টিকা দেবার আগে আপনার শরীরে ইতিমধ্যেই এই জীবাণু আছে কিনা পরীক্ষা করে নিতে হবে। প্রথমবার তিন ডোজ টিকা নেবার পর সাধারণত প্রতি ৫ বছর পরপর পুনরায় এ টিকা নিতে হয় যেন টিকার কার্যক্ষমতা বজায় থাকে।
টিকা ছাড়াও সার্ভিকাল ক্যান্সার থেকে বাচার উপায় হল নিয়মিত স্ক্রিনিং। স্ক্রিনিং এর ফলে এই ক্যান্সার প্রথম দিকে ধরা যায়, ফলে সহজে চিকিৎসা করা সম্ভব হয়। সারভাইকাল ক্যানসারের স্ক্রিনিং এর জন্য ৩০ বছর বয়স থেকে (অথবা বিয়ের পাঁচ বছর পূর্ণ হবার পর থেকে) প্রতি তিন বছর পর পর নিকটস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে পরীক্ষা করানো উচিত। বাংলাদেশে বেশিরভাগ সরকারী হাসপাতালে বিনামূল্যে এই স্ক্রিনিং করা হয়। তবে ৬৫ বছরের পর এই ক্যানসারের ঝুঁকি কমে যায়, সুতরাং তখন আর নিয়মিত এই স্ক্রিনিং করানোর প্রয়োজন নেই।
আর সার্ভিকাল ক্যান্সার হয়ে গেলে এর চিকিৎসা সম্ভব। আক্রান্ত রোগীরা হিস্টেরেকটমি বা জরায়ুতে অস্ত্রোপচার অথবা কেমো আর রেডিও থেরাপি নিয়ে সুস্থ হতে পারবেন।
সবার আগে দরকার অহেতুক লজ্জা ও ভয় দূর করা। প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ ভালো, তাই না?
ক্রেডিট







